সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬

মলয় রায়চৌধুরী



নেভো মোম নেভো


আপনি আমার প্রিয় নারী, যদিও শুধুই শুনেছি ঘুমন্ত কন্ঠের কালো
ফিল্মে দেখেছি, আগুন-নগ্নিকা,  বুক দুটো অতো ছোটো কেন
দুঃখ হয় না কি? আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল বুক ছোটো বলে
হত্যা করতে গিয়ে কিছুটা ঝুঁকলেন নয়তো বুক উঁচু করে বলতেন
যা করি তা করি প্রেত তোর তাতে কি তুই কি ঘুমের ইন্দ্রজালে
শুধু বুক খুঁজে বেড়াস নাকি! সত্যিই তাই, আপনার ঘুমে ঢুকে
তাছাড়া কি খুঁজবো বলুন, ফেরার ট্যাক্সিভাড়া? গ্যাসের রসিদ?
যা ইচ্ছে করুন আপনি, জেনে নেবো, চলন্ত গাছেরা বলে দেবে,
না জানলেও আকাশ তো ভেঙে পড়ছে না, আপনি আমার প্রিয় নারী
মন খারাপ করে দিলেন আজকে বৃষ্টির দিনে, ছাতাও আনিনি
আপনার পাশ দিয়ে যেতে যেতে যেতে ছাতার আড়াল থেকে আপনার
ছোট্টো দুটো বুক জরিপ করে নিতে পারি, ব্র্যাঙ্কোর প্রেত আমি
ছোরাদুটো নিলেন দুহাতে তুলে, মনে হয়েছিল বুকের গরবিনি, হত্যা
নেহাতই অযুহাত, কেউ তো আর মনে রাখবে না, উনিও জানেন
তোমাকে দেখেই চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল, না না, হাঁমুখের ঠোঁটে নয়
পাছার দু-ঠোঁটে, আহা কি মসৃণ হতো রাজরানি হওয়া, যেন ইস্কাপন
নষ্ট করে নেচে উঠছে বিদ্যুতের খ্যাতি, যার অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি না
খুলে বলি আপনাকে, আমি কিরকমভাবে নারীকে খুঁজি তা বলছি শুনুন।
যেমন ঘোড়দৌড়ের জুয়াড়িরা ঘোড়ার রেসবই খুঁটে-খুঁটে পড়ে
আমার ভেতরে সেরকমই পোষা আছে অভিজাত কয়েকটা অসুখ
বুঝলেন, যখন প্রথম পড়ি প্রেমে পড়ে গিসলুম নগ্ন আপনার!
লেডি ম্যাকবেথ! আহা কী শঙ্খিনী নারী, কী ডাগর রক্তময়ী চোখ
ঘুমন্ত হেঁটে যাচ্ছো মৃত্যুর মসলিনে সম্পূর্ণ পোশাকহীন কোনো খেয়াল নেই
চেয়েছি জড়িয়ে ধরতে, বলতে চেয়েছি, লেডি, লেডি, নগ্ন পশ্চিমে
একটা চুমু শেষবার দাও, পুরস্কার নিয়ে ডাইনিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে
রক্তাক্ত ছোরার সঙ্গে কথা বলো, বুকের নির্দয় ওঠা-নামা, লেডি
ম্যাকবেথ, ওই যিনি ছোটো বুকে মনটা খারাপ করে ফিরছেন বাড়ি
ওনাকে উৎসাহিত করো, বলো, আরবের সমস্ত আতর ধুতে পারবে না
হত্যার মিষ্টি গন্ধ, যেমনই লোক হোক সে তো তার নিজস্ব দৈত্যের সৃষ্টি
তেমন নারীও, আত্মজীবনীতে লিখবেন কিন্তু প্রথম হস্তমৈথুনের স্বাহা
ক্লিটোরিসে অঙ্গুলিবাজনার মৃদু উগরে তোলা ঝর্ণাঝংকার
আপনার নগ্নতার ব্যক্তিগত ছন্দ লেডি ম্যাকবেথের মতো হাঁটছেন
কলকাতার রাস্তা দিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আমি ব্যাঙ্কোর প্রেত, প্রতিটি হত্যাদৃশ্যে উপস্হিত থেকে
বুকের বর্তুলতা মাপি, যবে থেকে স্কুলপাঠ্য বইয়ে দুরূহ লেগেছিল
লেডি ম্যাকবেথের লোভ সিংহাসনে রাজমহিষীর মতো উঁচু বুকে
বসে আছো, স্কুল ফেরত সম্পূর্ণ উলঙ্গ তুমি হাঁটছো পাশাপাশি
ঘুমন্তকে নয় ঘুমকে খুন করেছিলে তুমি, চিৎকার করছিলে
“কে জানতো বুড়ো লোকটার গায়ে এতো রক্ত এতো রক্ত ছিল!”
এসবই আপনার নারীত্বের রক্ত ছোট্টো দুটো বুকের দুঃখের
ভাববেন না বেশি, যৌবন ফুরোবার সঙ্গে এই দুঃখ চলে যাবে
তখন দেখবেন ক্লিটোরিস সাড়া দিচ্ছে না, রসশাস্ত্রহীন দেহ
আদিরস প্রথমে লোপাট, ঘুমন্ত হাঁটবার আহ্লাদ নামছে দুঃস্বপ্নে
আপনার ছোটো বুক ছোট্টোই থেকে যাবে যতোই উদার হোন
ভিখিরি দেখলেই বটুয়াতে কয়েনের ওজন কমান, লেডি ম্যাকবেথ
ছাড়বে না, উচ্চাশার কি দুর্দশা, হাতে রক্ত, নেভো  মোম নেভো

বিদারের নসট্যালজিয়া


কেমন করে বেঁচে থাকতে হবে শেখা বেশ কঠিন, শেখা মানে ‘চলে যাচ্ছে
         টাইপ’ নয়, যা বলতে চাইছি, অভ্যস্ত হতে সময় লাগে, তাছাড়া
         গর্ত দেখলেই কান পাততে ইচ্ছে করে
ঘটনার, জিনিসের, কথার মানেগুলোকে একজায়গায় জড়ো করে
         প্রাসঙ্গিক মানুষদের বুঝতে পারা আরও কঠিন, আমি চেষ্টা করি
         লেগিংস-পরা মেছোবক, এই  কপাৎ, ঢুকেছে কি ? কষ্ট হল?
দেখেছি, গাঁজা-চরস ফোঁকা ছেড়ে দেবার পর বেশ কিছুকাল শোকে
         আক্রান্ত ছিলুম, তার কারণ নিজেকে খারাপ প্রমাণ করা আর
         বাইশ শতকের চুমু এরকমই শামুকের নিঃশর্ত লালা
প্রমাণ করার পর তার প্রভাবকে সহ্য করা সহজ ছিল না,  গোপনীয়তা
         কাউকে বলার মতন নয়, যাবতীয় ভোগান্তি একার, যেমন ধরুন
         ইংরেজিতে ‘পুসি’ শুনতে ভাল্লাগে বাংলায় বড্ডো অশ্লীল
যে কমিউনিস্টরা রুবলের লোভে রাশিয়ায় গিয়ে ডেরা বেঁধেছিল
         আধপেগ ভোদকা চুইয়ে চেটে দেখেছেন নাকি
         বাবা তাদের কাউকে ক্ষমা করতে পারেননি, বলতেন লেনিনখোসা
অথচ বাবা জানতেন আমি উপন্যাস লিখছি আর বানানো চরিত্রে
         বেমালুম ঢুকে পড়ছি, চরিত্রগুলো জানতে পারছে না, রেগে
         বিশেখুড়োর তোলা কাকিমার নগ্নিকা ফোটোর অ্যালবামে
যাওয়ায় আনন্দ আছে, অলৌকিক ক্ষিপ্তাবস্থাকে ন্যায্য মনে হয়, নয় কি
         যে পরিবারগুলো নিজেদের মার্জিত গুণের মালিক মনে করতো
         এমন ডবকাগুদো পাৎলিকোমর যাকে নিয়ে ছেলেরা লড়ে না
মা তাদের পছন্দ করতেন না, বলতেন, ওদের সঙ্গে মিশিসনি, আমার
         বাবা-মা বেশ রাশভারি ছিলেন, সৎ থাকার কথা বলতেন, আমি
         লেসবিয়ান কমিউনিস্টের প্রেমে পড়লুম, যখন ২০-৩০ বছরে
এখনকার মতন এসকর্টস আর হাইফাই মডেল যৌনকর্মীর উড়ুক্কু
         চল শুরু হয়নি, আমার লুঙ্গি-রুমমেট করিম গ্যাসের উনুনে
         মুর্গিটা পুড়িয়ে তারপর রাঁধতো যাতে আগুন রক্ত খেয়ে নেয়
পাঁঠা কিনে আনলে জলে ভিজিয়ে রাখতো, যাতে রক্ত জলে মিশে যায়
         মইনুদ্দিন মৌলবি বলেছিলেন, অমন নির্দেশ কোথাও নেই, স্বাদ
         শেষকালে বিকেলের কন্ঠস্বর কাঁকুরে হয়ে যাবে, স্বপ্নেরা  বিমূর্ত
ওইখানে ঠোঁট রেখে দপদপ ধ্বনি খাই ওগো মাংসল আওয়াজ বেজে ওঠো
         নিয়ানডারথাল চুলে ঢাকা মাসান্তে চুনির নদী পোখরাজি অবরেসবরে
         ফেঁপে কেঁদে ওঠো জয়-মা আঠাকালী বাইসাইকেল দেহ
এক টনের আঠারো ডিগ্রি শীতে ডিউ ডেটের আগে পিল খেতে হবে
         দেহের টাইমফ্রেম সাকুল্লে তিরিশ বছর ধরো
         কতোজন পুরুষের মাংসখণ্ড এলো আর গেলো ভেবেছো কখনো?
চব্বিশকে ছয় দিয়ে গুণ করুন আর তাকে তিরিশ দিয়ে এটা মিনিমাম

উর্বশীর ডেথ সার্টিফিকেট


বললুম...হ্যাঁ...পুরো শরীরটাই দেখতে চাই...চাদর সরিয়ে দিন...ডোম বলল ‘তার জন্য টাকা লাগবে’...লাশ চিনতে পুরো শরীর দেখার দরকার হয় না...আমার দরকার আছে, বললুম...মুখ তো বহুবার দেখেছি...শরীর দেখতে দেয়নি...বুকও নয়...আর ইয়ে...মহিলা ডাক্তার বলল, কান্টও নয়, তাইতো...লজ্জা পাচ্ছেন মর্গে ঢুকেও...কেমন প্রেমিক আপনারা...বললুম, নাহ, আমি প্রেমিক বই...ভেতরের জামা পরত না ইজের পরত না জানি...নিজে গান গাইতো না...শুনে-শুনে নাচতো...ঘামতো বলে লনজারি পরতো না...ত্বকে র‌্যাশের ভয়ে...কুড়িজন মরা মানুষের গন্ধ...পাঁঠা কিনতে এসেছি যেন...তাহলে আপনি ওনার কে হন...আমি ওনার মাছরাঙা ফিঙেফড়িং দাঁড়কাক পলাশফুল পানকৌড়ি যা ইচ্ছে লিখতে পারেন...যমালয়ের দুর্গন্ধ...উনি নিজের নাম উর্বশীতে দুটো ব ব্যবহার করতেন না একটা...পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়ে য-ফলা দিতেন কিনা জানেন...ভালোবাসার ন্যারেটিভে এগুলো কি অবান্তর প্রশ্ন নয়...শহুরে লজ্জা ঢাকতে পকেট থেকে নিপ বের করে এক ঢোঁক...শ্বাসের স্মৃতি বলতে ওর ‘না’ বলবার প্রতিভা ছিল...নিজেকে এড়াতে আয়না দেখতো না...পোস্টমর্টেমের সময়ে যোনির আর বগলের চুল কাইন্ডলি শেভ করে আমায় দেবেন...ডেথ সার্টিফিকেটের সঙ্গে রেখে দেবো...এটুকুতো অনন্ত প্রাপ্য...এই কবিতাটা কোথায়  গিয়ে থামবে...সুন্দরবনের মোহনায়...ছাই ভাসুক...ছাই ভাসুক...ভেসে যাক কুমিরের ঝাঁকে...

অবন্তিকার  শতনাম 


আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া — বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায় —  ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে — বাঁদিকের বোঁটার নামকরণ করেছি কুন্দনন্দিনী — বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে — ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার সে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ — ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই —  ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই — যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয় — প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয় — পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না — যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম — অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠল পিকাসো পিকাসো পিকাসো — পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই —  কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য — তাহলে ভগাঙ্কুরের — ও বলল সেটা আবার কি জিনিস — ওর হাত দিয়েই ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলোতো — পান্তুয়া চলেবে — ধ্যুৎ — রস মানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতোরকমের মিষ্টি হয় — ছানার পায়েস — নারকেল নাড়ু — রসমালাই — নকশি পিঠা — রাজভোগ— লবঙ্গলতিকা — হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায় — আমি বললুম স্বাদটা কিছুটা নোনতা — ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে — হ্যাঁ — এগোই — পাছার কি দুটো নাম হবে — ডিসাইড কর — ডিসাইড কর — তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না — না না ফের ফের — লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী — পারফেক্ট হয়েছে — তাহলে পাছার একটাই নাম দিই নরম-নরম কোনো নাম — পাসওয়র্ড — ঠিক — এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড — ধ্যাৎ — পুরো রোম্যানটিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস — গ্যাস পাস হয় বলে পাসওয়র্ড হতে যাবে কেন — ছিঃ — তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি — গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে — ওকে — তারপর — ঘুমোবো কখন — বাঁ-উরুর নাম দিই ককেশিয়া — ডান-উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া — রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না — ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে  প্রতিটি রোমকূপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে — শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে — না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায় — ছাড় ছাড় — এগো — মানে — নামতে থাক — তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো — তাহলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ — বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ — এবার ওপরে আয় — মুখে — ঠোঁট ? — ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি — আচ্ছা! ঠোঁটের নাম আফ্রিকান সাফারি ? — ব্লোজবে খণ্ড-খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো — খাস — থুতনিতে সেকেন্ড চিন! পিৎজা-কোক খাওয়া থামা — থুতনির নাম দিই গোলাপজাম — কেন কেন কেন — পরে বলব — এখন দুচোখের নাম দিই — শতনাম হলো না তো — চোখ বোজ চোখ বোজ — তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কি দরকার — তাহলে আয় — আজ তুই ওপরে না নিচে?



মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ, কার্তুজ'এর সঙ্গেই থাকুন।