হারুন
বারান্দায় অনেক রোদ
হারুন আপনার গা পুড়ে যায়, তাও বসে থাকেন
সাত তলায়
রেলিং
নাই
আপনার বউ রোদে চাদর শুকাতে আসে
আপনি বসে থাকেন, আপনার গা পুড়ে যায়
আপনার বউ চাদর উল্টাতে যায়
হারুন আপনার তখন মনে হয়
সে বারান্দা থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
আপনার গা পুড়ে যায়
আর আপনার বউ চাদর উল্টে
পড়ে
যায়
সাত তলা থেকে
‘হারুন! আপনার বউকে ধরুন!’
আপনি ধরতে যান। চাদর ধরেন; সে রাস্তায়।
হারুন আপনার গা পুড়ে যায়, তাও বসে থাকেন
সাত তলায়
রেলিং
নাই
আপনার বউ রোদে চাদর শুকাতে আসে
আপনি বসে থাকেন, আপনার গা পুড়ে যায়
আপনার বউ চাদর উল্টাতে যায়
হারুন আপনার তখন মনে হয়
সে বারান্দা থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
আপনার গা পুড়ে যায়
আর আপনার বউ চাদর উল্টে
পড়ে
যায়
সাত তলা থেকে
‘হারুন! আপনার বউকে ধরুন!’
আপনি ধরতে যান। চাদর ধরেন; সে রাস্তায়।
২___
আপনার বউয়ের জ্ঞান ফেরে হাসপাতালে
আবার
চলে
যায়
তাও
হাসপাতালে;
চিরতরে
হারুন কিছু বোঝার আগেই পুলিশ
আপনাকে ধরে নিয়ে যায়
থানায়
আপনার বউ বলে গেছে
আপনি তাকে ধাক্কা মেরেছেন।
আপনার বউয়ের জ্ঞান ফেরে হাসপাতালে
আবার
চলে
যায়
তাও
হাসপাতালে;
চিরতরে
হারুন কিছু বোঝার আগেই পুলিশ
আপনাকে ধরে নিয়ে যায়
থানায়
আপনার বউ বলে গেছে
আপনি তাকে ধাক্কা মেরেছেন।
৩___
মানুষ কতটা হারামী হতে পারে বারান্দা
থেকে বউ না পড়লে তা বোঝাই যায় না
এক কাগজে লিখেছে টাকার জন্য খুন,
এক কাগজে লিখেছে যৌনবিকৃতি;
এক কাগজে লিখেছে আপনার
এক কাগজে লিখেছে দুজনারই
আপনার ছবিতে ছবিতে ছেয়ে গেছে মহল্লার দেয়াল;
হারুন, পাড়ার ছেলেরা উৎসবটা হাতছাড়া করতে চায় না।
৪___
আপনি দেখতে পান
কেউ আপনার সত্য কথাটা বিশ্বাস করে না
পুলিশ অথবা আপনার মা;
আর তখন আপনার মনে হতে থাকে
হয়ত আপনিই ভুল বলছেন;
হয়ত আপনিই ধাক্কা দিয়েছেন
রিমান্ডের তৃতীয় দিন আপনি স্বীকার করেন
অভিযোগ সত্য
আপনি দোষী,
হারুন, খুনের বিচার ফাঁসি!
আপনি দেখতে পান
কেউ আপনার সত্য কথাটা বিশ্বাস করে না
পুলিশ অথবা আপনার মা;
আর তখন আপনার মনে হতে থাকে
হয়ত আপনিই ভুল বলছেন;
হয়ত আপনিই ধাক্কা দিয়েছেন
রিমান্ডের তৃতীয় দিন আপনি স্বীকার করেন
অভিযোগ সত্য
আপনি দোষী,
হারুন, খুনের বিচার ফাঁসি!
৫___
মরে যাবার সময় আপনি মুহূর্তের মধ্যে গোটা জীবন
স্থিরচিত্রের মতো দেখতে পান। আর তখন খুব পরিস্কার দেখতে
পান আপনি বারান্দায় বসা আর চাদর উল্টে আপনার বউ
সাত তলা থেকে পড়ে যাচ্ছে; আপনি বুঝতে পারেন
কী অন্যায় আপনার সাথে করা হয়েছে
কিন্তু ন্যায়বিচার কোথায় পাবেন?
হারুন, এখন খোদার কথা ভাবেন।
মরে যাবার সময় আপনি মুহূর্তের মধ্যে গোটা জীবন
স্থিরচিত্রের মতো দেখতে পান। আর তখন খুব পরিস্কার দেখতে
পান আপনি বারান্দায় বসা আর চাদর উল্টে আপনার বউ
সাত তলা থেকে পড়ে যাচ্ছে; আপনি বুঝতে পারেন
কী অন্যায় আপনার সাথে করা হয়েছে
কিন্তু ন্যায়বিচার কোথায় পাবেন?
হারুন, এখন খোদার কথা ভাবেন।
৬___
পুলিশের কাছে মিথ্যা বলার
অপরাধে
খোদা
আপনাকে দোজখে পাঠালো।
যে দোজখ আপনার অনেক পরিচিত
দোজখে অনেক আগুন
তাতে
আপনার
গা
পুড়ে
যায়
যেন সাত তলার বারান্দায় বসে আছেন
আপনার বউ বারান্দায় আসে
আপনার মনে হয় সে
বারান্দা
থেকে
পড়ে
যাবে
রেলিং নাই
হারুন! পড়ে যাবার আগে ধরুন!
পুলিশের কাছে মিথ্যা বলার
অপরাধে
খোদা
আপনাকে দোজখে পাঠালো।
যে দোজখ আপনার অনেক পরিচিত
দোজখে অনেক আগুন
তাতে
আপনার
গা
পুড়ে
যায়
যেন সাত তলার বারান্দায় বসে আছেন
আপনার বউ বারান্দায় আসে
আপনার মনে হয় সে
বারান্দা
থেকে
পড়ে
যাবে
রেলিং নাই
হারুন! পড়ে যাবার আগে ধরুন!
সম্পর্ক
আমার বাবাকে একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়েছি।
প্রতি সপ্তাহে পনেরশ টাকা পাওয়া যাবে। তার বয়স
কম। এই মার্চে ৭২ হবে। এনজিওর পরিচালক বলেছে
বয়স ৮২ হলে আরও সাতশ টাকা বেশি পাওয়া যেত।
বাবাকে মাঠকর্মীর কাছে তুলে দেয়ার সময় তার চোখ
ভেজা ছিলো। চোখ মুছে উনি বলছিলেন, তুই পারলি?
আমি চুপ থাকি। এর উত্তরে আর কীইবা বলা যায়!
মাঠকর্মী তাকে পিকআপে ওঠানোর সময় তিনি আমার
মৃত্যু কামনা করলেন। আমি অবশ্য তার দীর্ঘায়ু চাই,
বাবাকে ভাড়া দেয়া ছাড়া; আমার কোনো রোজগার নাই!
প্রতি সপ্তাহে পনেরশ টাকা পাওয়া যাবে। তার বয়স
কম। এই মার্চে ৭২ হবে। এনজিওর পরিচালক বলেছে
বয়স ৮২ হলে আরও সাতশ টাকা বেশি পাওয়া যেত।
বাবাকে মাঠকর্মীর কাছে তুলে দেয়ার সময় তার চোখ
ভেজা ছিলো। চোখ মুছে উনি বলছিলেন, তুই পারলি?
আমি চুপ থাকি। এর উত্তরে আর কীইবা বলা যায়!
মাঠকর্মী তাকে পিকআপে ওঠানোর সময় তিনি আমার
মৃত্যু কামনা করলেন। আমি অবশ্য তার দীর্ঘায়ু চাই,
বাবাকে ভাড়া দেয়া ছাড়া; আমার কোনো রোজগার নাই!
শূন্যস্থান
কবিতার দুটি লাইনের মধ্যে এতটুকু শূন্যস্থান রাখতে
হয় যেন তার মধ্যে একটা সূর্য উঠতে পারে আর
সূর্যের আলোয় একটা লোক হকার্স মার্কেটে কমলা
রঙের একটা মশারির দরদাম করতে পারে। দরদাম
শেষ হবার আগেই
এই
কবিতা
পরের
লাইনে
চলে যাবে যেখানে দেখা যাবে লোকটা তারও পরের
লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে ছুটছে। কেননা একটু
আগে তার পকেটকাটা গেছে। সে পকেটমারের পেছনে
দৌড়াচ্ছে। আর তার পেছনে দৌড়াচ্ছে আরও দশজন।
(ঐ দশজন অবশ্য তাকেই পকেটমার সন্দেহ করছে!)
দৌড়াতে
দৌড়াতে
লোকটা
একটা ঠেলাগাড়ি, দুইটা ভ্যান আর তিনটা রিক্সা পেছনে
ফেলে এখন একটা বাসের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর
অবাক ব্যাপার যে বাসটাও তার সামনে সামনে দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
এভাবে কবিতা পরের লাইনে গেলে দেখা যায়
ঐ লোকটার চেয়ে
পেছনের দশজন ভালো দৌড়েছিল
আর
পকেটকাটার
অপরাধে লোকটার লাশ ফুটপাতে পড়ে আছে;
তবু তার
দৌড় থামানো যায় না, কেননা
মানুষ জীবনভর নিজের লাশের পেছনে দৌড়ায়,
সে লাশের যত কাছে যায়
লাশ তত দূরে সরে যায়
লোকটা
তাও
দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে লোকালয়
আর পাহাড় অতিক্রম করে এখন একটা
জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াচ্ছে
আর তার সামনে
দৌড়াচ্ছে একটা বাঘ
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
কবিতার
পরের
শূন্যস্থানে বাঘ থেমে যায়। আর তার পেছনে
থেমে যায় লাশ। ফলে লোকটা তার লাশটাকে ধরে
ফেলে। আর এখন সে বাঘটাকে অনুরোধ করছে
যেন দয়া করে তার লাশটা খেয়ে ফেলে।
বাঘ বলল ‘কী নাম?’
লোক বলল ‘জামান’
বাঘ বলল ‘জামান, নিজের টাকা চুরি করে
যে লাশ হয় তাকে আমার খাবার রুচি হয় না’
এই বলে বাঘ কবিতায়
মিলিয়ে যায় আর
লোকটা তার লাশ নিয়ে ফের দৌড়ানো শুরু করে
তার
মাথার উপর
দৌড়ায়
শূন্য থেকে বের হয়ে আসা চাঁদ
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
এরপর
চাঁদ ডুবে
গেলে কবিতার দুই লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে সূর্য ওঠে
যার আলোয় লোকটা হকার্স মার্কেটে মশারি কিনতে যায়
আর লাশ হয়ে পুনরায়
এতদূর
আসে
(অথচ কবিতার শেষেও থাকে এক দীর্ঘ শূন্যস্থান
যেখানে অনায়াসে একটি কবর রচনা করে
চক্র ভাঙা যায়)
‘জামান?’
‘জ্বি’
আপনার লাশটা ঐ শূন্যস্থানে নামান!’
হয় যেন তার মধ্যে একটা সূর্য উঠতে পারে আর
সূর্যের আলোয় একটা লোক হকার্স মার্কেটে কমলা
রঙের একটা মশারির দরদাম করতে পারে। দরদাম
শেষ হবার আগেই
এই
কবিতা
পরের
লাইনে
চলে যাবে যেখানে দেখা যাবে লোকটা তারও পরের
লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে ছুটছে। কেননা একটু
আগে তার পকেটকাটা গেছে। সে পকেটমারের পেছনে
দৌড়াচ্ছে। আর তার পেছনে দৌড়াচ্ছে আরও দশজন।
(ঐ দশজন অবশ্য তাকেই পকেটমার সন্দেহ করছে!)
দৌড়াতে
দৌড়াতে
লোকটা
একটা ঠেলাগাড়ি, দুইটা ভ্যান আর তিনটা রিক্সা পেছনে
ফেলে এখন একটা বাসের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর
অবাক ব্যাপার যে বাসটাও তার সামনে সামনে দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
এভাবে কবিতা পরের লাইনে গেলে দেখা যায়
ঐ লোকটার চেয়ে
পেছনের দশজন ভালো দৌড়েছিল
আর
পকেটকাটার
অপরাধে লোকটার লাশ ফুটপাতে পড়ে আছে;
তবু তার
দৌড় থামানো যায় না, কেননা
মানুষ জীবনভর নিজের লাশের পেছনে দৌড়ায়,
সে লাশের যত কাছে যায়
লাশ তত দূরে সরে যায়
লোকটা
তাও
দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে লোকালয়
আর পাহাড় অতিক্রম করে এখন একটা
জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াচ্ছে
আর তার সামনে
দৌড়াচ্ছে একটা বাঘ
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
কবিতার
পরের
শূন্যস্থানে বাঘ থেমে যায়। আর তার পেছনে
থেমে যায় লাশ। ফলে লোকটা তার লাশটাকে ধরে
ফেলে। আর এখন সে বাঘটাকে অনুরোধ করছে
যেন দয়া করে তার লাশটা খেয়ে ফেলে।
বাঘ বলল ‘কী নাম?’
লোক বলল ‘জামান’
বাঘ বলল ‘জামান, নিজের টাকা চুরি করে
যে লাশ হয় তাকে আমার খাবার রুচি হয় না’
এই বলে বাঘ কবিতায়
মিলিয়ে যায় আর
লোকটা তার লাশ নিয়ে ফের দৌড়ানো শুরু করে
তার
মাথার উপর
দৌড়ায়
শূন্য থেকে বের হয়ে আসা চাঁদ
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
এরপর
চাঁদ ডুবে
গেলে কবিতার দুই লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে সূর্য ওঠে
যার আলোয় লোকটা হকার্স মার্কেটে মশারি কিনতে যায়
আর লাশ হয়ে পুনরায়
এতদূর
আসে
(অথচ কবিতার শেষেও থাকে এক দীর্ঘ শূন্যস্থান
যেখানে অনায়াসে একটি কবর রচনা করে
চক্র ভাঙা যায়)
‘জামান?’
‘জ্বি’
আপনার লাশটা ঐ শূন্যস্থানে নামান!’
মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ, কার্তুজ'এর সঙ্গেই থাকুন।