সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬

মুজিব ইরম


চম্পুকাব্য


সে বড়ো দেমাগী হয়, আর আমাদের বিদ্যালয়ের দিনগুলো বিরহী হয়ে ওঠে। ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সম কোণের সমান—এই সব জ্যামিতিক মারপ্যাঁচ অসহ্য ঠেকে। আমরা ভুল করি আর লাস্ট বেঞ্চে বেদনা ঝরাই।

তার চিপচিপে দেহ বাতাসে দোলে, তার বাঁকা চোখের কটাক্ষ আমাদেরকে ধরাশায়ী করে। আমরা তার মন পেতে চাই, আমরা তার দয়া পেতে চাই।

এ এক এমনি সময়, কারো দেমাগ, কারো বা হাসি, কারো চলার ভঙ্গি, কারো বা চোখ, দেহের গড়ন আমাদেরকে কাতর করে। আমরা রাত জেগে মন ভিজাই, বেদনা বাড়াই।

আর একে একে এইসব হাসি, এইসব দেমাগী চলন, দেহের গড়ন আমাদেরকে বেফানা করে জীবন থেকে নাই হতে থাকে। লন্ডনীরা সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপারে নিয়ে যায়, আর আমাদের হৃদয় ঝাঁঝরা হতে থাকে।

আমরা শুধু বড় বড় পাশ দিই, আর দিনে দিনে সুন্দর হারাই!


শীত নামে আর বিকাল বেলার চারা বিছরা আমাদের মন টানে। আমরাও দল বেঁধে হরতন-রুইতনের প্রেমে পড়তে চাই। পুবের বিলে রাত জেগে শুনতে চাই মালজোড়া, পীরমুর্শিদী গান। এতোসব আমরা পারি না। গার্জিয়ানদের কড়া নজর আমাদেরকে কান ধরে পড়ার টেবিলে বসায়। আমরা ‘যে জন দিবসে মনের হরষে’ জপতে জপতে গলায় রক্ত তুলি।

কিন্তু এতাসব সুজা ভাই পারে। আর পারে বলেই সে হিরো হয়। দক্ষিণ পাড়ার কমলা আপার প্রেমে পড়ে, কিন্তু সফল হয় কি না আমরা তা বুঝতে পারি না। আমরা দেখি কমলা আপার হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেলে গাঞ্জা খেয়ে সুজা ভাই পাড়ার টং দোকানে হৈ চৈ করে, আর ঝিম মেরে থাকে।

একদা আমরা বিদ্যালয়ে যেতে এও দেখতে পাই আমাদের হিরো সুজা ভাই চৌরাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোলে ব্যস্ত। জগতের এত এত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ তার আয়ত্বের বাইরে চলে যেতে থাকলে দিন শেষে আমাদের সুজা ভাই গ্রামে ফিরে রাত পাহারায় নিয়োজিত হয়। আমরা তখনও সুর করে পড়তে থাকি—কাঁটা হেরি ক্লান্ত কেনো কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে?


মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ, কার্তুজ'এর সঙ্গেই থাকুন।